
উখিয়া নিউজ ডেস্ক::
বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার ২ বছরের অধিক সাজা হলে নির্বাচনে অযোগ্য হবেন বলে জানিয়েছেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মোশাররফ হোসেন কাজল।
বৃহস্পতিবার (২৫ জানুয়ারি) জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে তিনি এ কথা বলেন।
মামলায় বিএনপি চেয়ারপার্সনসহ ৬ জনের বিরুদ্ধে আগামী ৮ ফেব্রুয়ারি রায় ঘোষণার দিন ধার্য করেছেন আদালত। বৃহস্পতিবার রাজধানীর বকশিবাজারের আলিয়া মাদরাসা মাঠে স্থাপিত ঢাকার ৫নং বিশেষ জজ ড. আখতারুজ্জামান এ দিন ধার্য করেন।
এদিন আদালত শুরু হয় বেলা ১১ টা ৪০মিনিটে। ব্যবসায়ী সরফুদ্দিন আহমেদ ও সাবেক সাংসদ সালিমুল হকের পক্ষে আইনজীবী যুক্তি উপস্থান শেষ করার পর রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী মাত্র ৬ মিনিটে যুক্তি উপস্থাপন শেষ করেন।
এরপর খালেদা জিয়ার আইবজীবী অ্যাডভোকেট জয়নাল আবেদীন বক্তব্য দিতে উঠেন। তিনি বক্তব্য শেষ করার জন্য পরবর্তী সময় চান। কিন্তু আদালত তা নাকচ করে দিয়ে ৮ ফেব্রুয়ারি রায়ের তারিখ ঘোষণা করে আদালতের কার্যক্রম শেষ করেন।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল বলেন, বেগম খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন এতিমের অর্থ আত্মসাৎ করেছেন। এতিমের অর্থে নিজের ছেলেদের নামে ট্রাস্ট করেছেন। তার মতো একজনের কাছে এ সামান্য অর্থ আত্মসাৎ করাটা অনেক লজ্জার।
তিনি বলেন, এ মামলায় আমরা সর্বোচ্চ সাজা (যাবজ্জীবন) প্রত্যাশা করছি। তবে দুই বছরের অধিক সাজা হলেই নির্বাচনের অযোগ্য হবেন তিনি। এদিকে এ মামলায় নিশ্চিত সাজার আশঙ্কা করছেন বিএনপি নেতারা।
ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেছেন, সাধারণ এ মামলা প্রথম থেকেই খারিজ হয়ে যাওয়ার কথা। কিন্তু এখানে রাজনৈতিক প্ররোচনা আছে। তবু আমরা আদালতের কাছে ন্যায় বিচার আশা করি।
বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, যে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে তা ভ্রান্ত। এটি সরকারি কোন অর্থ না। কুয়েতের আমির জিয়াউর রহমানের নামে এতিমদের জন্য দিয়েছিলেন। দুই কোটি টাকা বেড়ে এখন ৬ কোটি হয়েছে। বেগম খালেদা জিয়া ঐ টাকা কখনো দেখেনওনি, ব্যাংক একাউন্টও কোথায় তিনি তাও জানেন না। অথচ এ মামলার আসামী খালেদা জিয়া!
তিনি বলেন, আমরা আদালতে গিয়ে যুক্তিতর্ক শুনে বুঝি যে, এ মামলায় বেগম খালেদা জিয়া এবং অন্যদের কোন সাজা হবে না। তারপরও যেহেতু সরকার অবৈধ। জনগণের মতামতকে তোয়াক্কা করে না, সে কারণে সরকারের উদ্দেশ্য খারাপ! ৮ ফেব্রুয়ারি রায় ঘোষণা দিবে। সরকার চায় আমাদেরকে সাজা দিয়ে নির্বাচন থেকে দূরে রাখতে আর নির্বাচনহীন অবৈধ ক্ষমতা ধরে রাখতে। কিন্তু সভ্য মানুষ হিসেবে আমাদেরকে এর বিরুদ্ধে প্রস্তুত থাকতে হবে। যেকোন পরিবেশে আমরা দলকে শক্তিশালী করে ঐক্যবদ্ধ থাকবো।
মামলায় খালেদা জিয়াসহ অন্য আসামীরা হলেন- তারেক রহমান, মাগুরার সাবেক সাংসদ কাজী সালিমুল হক কামাল, ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদ, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সাবেক সচিব কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী ও বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের ভাগ্নে মমিনুর রহমান।
মামলার এজাহার থেকে জানা গেছে, জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টের দুই কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার ৬৪৩ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ এনে খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে ২০০৮ সালের ৩ জুলাই রমনা থানায় একটি মামলা করে দুদক।
২০১০ সালের ৫ আগস্ট তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করেন দুদকের উপ-পরিচালক হারুন-অর-রশীদ। ২০১৪ সালের ১৯ মার্চ তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন ঢাকার তৃতীয় বিশেষ জজ আদালতের বিচারক বাসুদেব রায়।
এছাড়া, জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টের নামে তিন কোটি ১৫ লাখ ৪৩ হাজার টাকা লেনদেনের অভিযোগে খালেদা জিয়াসহ চারজনের বিরুদ্ধে ২০১০ সালের ৮ আগস্ট তেজগাঁও থানায় আরও একটি মামলা করে দুদক।
এ মামলায় যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের জন্য ৩০ জানুয়ারি দিন ধার্য করেছেন একই আদালত।
চ্যারিটেবল মামলায় ২০১২ সালের ১৬ জানুয়ারি তদন্ত কর্মকর্তা দুদকের উপ-পরিচালক হারুন-অর-রশীদ বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াসহ চারজনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। ২০১৪ সালের ১৯ মার্চ তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন ঢাকার তৃতীয় বিশেষ জজ আদালতের বিচারক বাসুদেব রায়।
এ মামলায় আরও যারা আছেন- খালেদা জিয়ার সাবেক রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী (পলাতক), হারিছের তখনকার একান্ত সহকারী সচিব ও বিআইডব্লিউটিএ’র সাবেক নৌ-নিরাপত্তা ও ট্রাফিক বিভাগের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক জিয়াউল ইসলাম মুন্না এবং ঢাকার সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার একান্ত সচিব মনিরুল ইসলাম খান।
‘১৫ দিনের মধ্যে খালেদা জিয়াকে কারাগারে যেতে হবে’..
১৯ জানুয়ারি সন্ধ্যায় কক্সবাজারের চকরিয়ায় জাতীয় পার্টির কার্যালয়ে মতবিনিময় সভায় স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী মশিউর রহমান রাঙ্গা বলেছিলেন, আগামী ১৫ দিনের মধ্যে বিএনপির চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াকে কারাগারে যেতে হবে।
তার এ বক্তব্য নিয়ে দেশব্যাপী আলোচনার ঝড় ওঠে। বেগম খালেদা জিয়াও রাঙ্গার এ বক্তব্যে বিস্ময় প্রকাশ করেন।
২১ জানুয়ারি এক টুইট বার্তায় খালেদা জিয়া বলেন, ‘শুক্রবার, জানুয়ারি ১৯, পত্রিকায় এসেছে, বিনাভোটের এক প্রতিমন্ত্রী বলেছে, ‘১৫ দিনের মধ্যে খালেদা জিয়াকে জেলে যেতে হবে।’ বিচারাধীন মামলার রায় ঘোষণা আদালত অবমাননা নয়কি? বিচারবিভাগের স্বাধীনতা রক্ষায় মাননীয় প্রধানবিচারপতি কী ব্যবস্থা নিচ্ছেন, জনগণ সেইদিকে সতর্ক নজর রাখছে।’
‘একদিনের জন্য হলেও খালেদা জিয়াকে কারাগারে যেতে হবে’..
এছাড়া এই মামলার রায় প্রসঙ্গে ২১ জানুয়ারি তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু বলেন, বেগম খালেদা জিয়ার মামলার রায় আগামী দুই তিন মাসের মধ্যে হবে। রায়ে তিনি সাজাও পেতে পারেন আবার বেকসুর খালাসও পেতে পারেন। তবে আমার ধারণা তার সাজা হবে। খালেদা জিয়ার সাজা হলে একদিনের জন্য হলেও তাকে জেলে যেতে হবে। সাজার পরে বেগম খালেদা জিয়া যদি উচ্চ আদালত আপিল করেন আর হাইকোর্ট যদি বেগম খালেদা জিয়ার সাজা স্থগিত করে তাহলে তিনি আগামী নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করতে পারবেন।
পাঠকের মতামত